মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের ঘরোয়া সমাধান

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের ঘরোয়া সমাধান

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের ঘরোয়া সমাধান

ঘন ঘন প্রস্রাব হলে কি খাওয়া উচিত

সারাদিনে কয়েকবার প্রস্রাবের বেগ অনুভব করা একেবারেই সাধারণ বিষয়। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে দেখেন শৌচাগারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন, অনেকবার আপনার সময় আসার জন্য অপেক্ষা করছেন তাহলে আপনাকে নিজের কাছে স্বীকার করতে হবে যে আপনার হয়তো ঘন ঘন প্রস্রাবের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। এটা কখনো কখনো নিজেই ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু আবার এটা নিম্নোক্ত অবস্থার উপসর্গ হতে পারে।

কারণ যাই হোক না কেন, মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব ঘরেই সামলানো যায় মাত্র কয়েকটি ঘরোয়া টোটকা ব্যবহার করে। এই নিবন্ধে, আমরা আলোচনা করব মহিলাদের ঘন প্রস্রাব সামলাতে বিস্তারিত সাধারণ ঘরোয়া প্রতিকারের। কিন্তু প্রথমে আসুন আমরা উপলব্ধি করি মহিলাদের ক্ষেত্রে ঘন ঘন প্রস্রাব কীভাবে সংযুক্ত।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব উপলব্ধি

সাধারণত, যখন প্রস্রাব মূত্রথলিতে জমা হয়, এটা অনুভূত ও প্রসারিত হয়। তারপর পেশিগুলো চাপ দেয় প্রস্রাব বের করতে। এই বিন্যাস পুনরাবৃত্ত হয় সারাদিনে 6 থেকে 8 বার, নির্ভর করে আপনি কতটা তরল গ্রহণ করছেন।

কিন্তু যখন আপনার সারাদিনে 8 বারের বেশি প্রস্রাবের বেগ অনুভূত হয় (বা এর বেশি যতটা আপনি সাধারণ করেন) অথবা এক রাতে একবারের বেশি, তাহলে হয়তো আপনার অস্বাভাবিক ঘন ঘন প্রস্রাবের অভিজ্ঞতা হচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদে, ব্লাডার টিস্যুও হয়তো প্রস্রাবের অসংযমের দিকে যাবে অথবা নিজে থেকেই প্রস্রাব চুঁইয়ে পড়বে।

এখন আসুন উপলব্ধি করি মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার কারণ

  • মূত্রনালীতে সংক্রমণ (UTIs):

এটা হল মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের সবচেয়ে পরিচিত কারণ। UTI ঘটে যখন মূত্রনালীতে ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করে এবং ব্লাডার অথবা যেসব অঙ্গ মূত্রনালীর অংশ যেমন কিডনি, তাতে সংক্রমণ ঘটায়। UTI-এর লক্ষণের মধ্যে রয়েছে জ্বালাপোড়া অথবা প্রস্রাব করার সময় যন্ত্রণা এবং ঘন ঘন খুব কম পরিমাণ প্রস্রাব হওয়া। আপনার শরীর চেষ্টা করে এই সংক্রমণের কারক ব্যাক্টেরিয়া থেকে মুক্তি পেতে একে আপনার মূত্রনালীতে দিয়ে বাইরে বের করে দিতে। এজন্যই আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন অনুভূত হয়।

  • অতি সক্রিয় ব্লাডার (OAB):

মহিলাদের অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়ার কারণ এমন একটি পরিস্থিতি যেখানে ব্লাডার পেশি নিজে থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠে যাকে অতি সক্রিয় ব্লাডার বলে। এর ফলে প্রস্রাব করার হঠাৎ এবং জরুরি প্রয়োজন পড়ে। আপনার হয়তো প্রস্রাব ধরে রাখতেও সমস্যা হতে পারে। UTIs-এর মতো OAB প্রস্রাব করার সময় জ্বালাপোড়া বা যন্ত্রণার কারণ নয়।

  • পেলভিক ফ্লোর পেশির দুর্বলতা:

মহিলা এবং ঘন ঘন প্রস্রাব অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত কারণ ফেলভিক প্লোরের দুর্বলতা যা হয় শিশুর জন্ম, গর্ভাবস্থা এবং বৃদ্ধা বয়সের কারণে। পেলভিক ফ্লোর পেশি ব্লাডারকে সমর্থন জোগায়। যদি দুর্বল হয়, এই পেশিগুলি সমর্থন তুলে নেয় যা ব্লাডারের দরকার। এই কারণে ব্লাডারে অস্বস্তি হয় এবং তার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন পড়ে।

  • বর্ধিত তরল সেবন:

প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত তরল সেবনের ফলে বেশি প্রস্রাব উৎপন্ন হয়। আপনার ব্লাডারের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ, সেজন্য আপনার এটা খালি রাখা উচিত যাতে নতুনভাবে প্রস্রাব উৎপন্ন হতে পারে। এটা মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ। এইসঙ্গে ক্যাফিনযুক্ত বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় সেবনও আপনার ব্লাডার লাইনিঙে অস্বস্তি সৃষ্টি এবং প্রস্রাবের প্রয়োজনের কারণ।

  • মেডিক্যাল পরিস্থিতি:

নির্দিষ্ট কয়েকটি মেডিক্যাল পরিস্থিতি যেমন মধুমেহ, ইন্টারস্টিটিয়াল সিস্টাইটিস (ব্লাডারে প্রদাহ) এবং গর্ভাবস্থা বা মেনোপজের সময় হরমোনগত পরিবর্তনও মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবে অবদান রাখে। এসব পরিস্থিতি উপশমে মেডিকেশন ব্যবহৃত হয় যেমন ডাইইউরেটিক্স এবং অ্যান্ডিডিপ্রেস্যান্ট, যা মূত্র উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে।

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব দূর করার ঘরোয়া উপায়

মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠ কয়েকটি ঘরোয়া প্রতিকার এখানে দেওয়া হল:

  • হাইড্রেশন: ব্লাডারের স্বাস্থ্যের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান অপরিহার্য, কিন্তু কোনোভাবে এটা অতিরিক্ত করবেন না, নচেৎ মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাব আপনি খেয়াল করবেন।
  • ব্লাডার ট্রেনিং: আপনার ব্লাডারকে ট্রেনিং দিন সূচি অনুযায়ী খালি রাখার এবং বিলম্বিত প্রস্রাবের যাতে ব্লাডার নিয়ন্ত্রণ উন্নত হয়।
  • পেলভিক ফ্লোর অনুশীলন: পেলভিক ফ্লোর অনুশীলন করুন, যেমন কেগেল, ব্লাডার নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী এবং জরুরি ও ঘন ঘন প্রস্রাব হ্রাস করতে।
  • খাদ্যাভ্যাস পরিমার্জন:ব্লাডারের অস্বস্তিদায়ক খাবার এড়িয়ে চলুন যেমন ক্যাফিন, অ্যালকোহল, মশালাদার খাবার এবং কৃত্রিম মিষ্টি। এর পরিবর্তে খাবারে যুক্ত করুন ক্র্যানবেরি, তরমুজ এবং দই।
  • আয়ুর্বেদিক প্রতিকার: নির্দিষ্ট কিছু ওষধি ও সাপ্লিমেন্ট যেমন স পালমেট্টো, লাউয়ের বিচির নির্যাস এবং মার্শমেল্লো শিকড় পরিচিত প্রস্রাব ক্রিয়া ও ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণ উপশমের সমর্থনে।
  • উদ্বেগ ব্যবস্থাপনা: উদ্বেগ-হ্রাস কৌশল অভ্যাস করুন, যেমন ধ্যান, দীর্ঘ শ্বাসপ্রশ্বাস অনুশীলন এবং যোগব্যায়াম।
  • আকুপাংচার ও আকুপ্রেশার:থেরাপি যেমন আকুপাংচার ও আকুপ্রেশার ব্লাডার ক্রিয়া উন্নত এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হ্রাস করতে পারে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে।

জীবনশৈলী পরিমার্জন

ওপরে উল্লেখিত ঘরোয়া প্রতিকারের সঙ্গে আপনি এইসঙ্গে নির্দিষ্ট কিছু জীবনশৈলী পরিবর্তন করতে পারেন। এর অন্তর্ভুক্ত:

  • স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
  • নিয়মিত শরীরচর্চা
  • সামঞ্জস্যপূর্ণ পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকর আহার
  • ধূমপান এড়িয়ে চলুন যা আপনার ব্লাডারে অস্বস্তি সৃষ্টি করে এবং আপনার ঘন ঘন প্রস্রাবের লক্ষণকে আরও খারাপ করে
  • UTI প্রতিহত করতে সুন্দর স্বাস্থ্যবিধি অভ্যাস করুন যেমন সামনে থেকে পেছনে মুছে ফেলা এবং যৌন সঙ্গমের পর প্রস্রাব করা
  • শোওয়ার আগে তরল সেবনের পরিমাণ সীমিত করা যা রাত্রিকালীন প্রস্রাব হ্রাস করে
  • মূত্রনালীর প্রডাক্ট ব্যবহার যেমন ফ্রেন্ডস আলট্রাথিনজ স্লিম ফিট ড্রাই প্যান্ট মহিলাদের জন্য অবাঞ্ছিত দুর্ঘটনা প্রতিহত করে

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ মহিলাদের ক্ষেত্রে খুবই পরিচিত সমস্যা, কিন্তু একে তাঁদের জীবন নিয়ন্ত্রণ করতে দেওয়া যায় না। নিম্নোক্ত কারণ অনুধাপন এবং ঘরোয়া প্রতিকার প্রণয়ন আর জীবনশৈলী পরিমার্জন করলে আপনি কার্যকরীভাবে এই উপসর্গ সামলাতে পারেন। যদিও সঠিক ডায়াগনসিস ও ব্যক্তিগত চিকিৎসা সুপারিশের জন্য একজন স্বাস্থ্য পরিচর্যাকারী পেশাদারের সঙ্গে আলোচনা করা একান্ত অপরিহার্য।

প্রশ্নোত্তর

  1. মহিলাদের অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়ার সবচেয়ে পরিচিত কারণ কী?

মহিলাদের অতিরিক্ত প্রস্রাবের সবচেয়ে পরিচিত কারণ হল মূত্রনালীতে সংক্রমণ (UTI) যখন কোনো ব্যাক্টেরিয়া বাইরে থেকে পৌঁছয় মূত্রনালীতে এবং সমস্যা সৃষ্টি করে।

  1. ঘন ঘন প্রস্রাব কি সর্বদা আরও গুরুতর আশঙ্কার উপসর্গ?

ঘন ঘন প্রস্রাব সর্বদা আরও গুরুতর আশঙ্কার সংকেত নয়। এটা বিভিন্ন কারণে হতে পারে, যার মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত তরল সেবন, ক্যাফিন বা অ্যালকোহল সেবন অথবা স্বল্পস্থায়ী অবস্থা যেমন মূত্রনালীতে সংক্রমণ। যদিও, কিছু ক্ষেত্রে, ঘন ঘন প্রস্রাব স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে যেমন মধুমেহ, মূত্রে অসংযম অথবা কিডনির সমস্যা।

  1. হাইড্রেশন কীভাবে ঘন ঘন প্রস্রাবে প্রভাব ফেলে?

উপযুক্ত হাইড্রেশন কখনো মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবে সাহায্য করে না, কিন্তু প্রয়োজনের চেয়ে বেশি জল পান মহিলাদের অতিরিক্ত প্রস্রাবের কারণ হতে পারে।

  1. ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভবকারী ব্যক্তির কখন ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত?

ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ অনুভবকারী ব্যক্তির ডাক্তার দেখানো উচিত যখন তিনি অভিজ্ঞতা লাভ করেন:

  • প্রস্রাবের সময় যন্ত্রণা, জ্বালাপোড়া ভাব অথবা অস্বাচ্ছন্দ্য
  • প্রস্রাবে রক্ত
  • জ্বর, ঠান্ডা অথবা তলপেটে যন্ত্রণার মতো উপসর্গ
  • হঠাৎ এবং অনিয়ন্ত্রণ প্রস্রাবের বেগ
  1. চাপ অথবা উদ্বেগ কি মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে?

হ্যাঁ, চাপ ও উদ্বেগ মহিলাদের ঘন ঘন প্রস্রাবের কারণ হতে পারে। চাপে বা উদ্বেগে থাকলে, শরীর অ্যাড্রনালিন হরমোন নির্গত করে। এটা ব্লাডারকে স্টিমুলেট করে এবং যার ফলে ঘন ঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন পড়ে।

This post was last modified on Desember 3, 2024 2:37 pm